দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির উপায়

দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং খোলামেলা আলোচনা খুবই জরুরি। প্রথমেই ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, আপনার স্বামী আপনার মনের কথা অক্ষরে অক্ষরে বুঝে যাবেন। সাধারণত নারীরা ছোট ছোট বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে দক্ষ, কিন্তু পুরুষরা সেইভাবে স্ত্রীর মনের কথা সবসময় বুঝে নিতে পারে না। এটি তাদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।

যেমন, একটি উদাহরণ দেই। একজন বোন ও তার স্বামী একসঙ্গে বাজার করতে গিয়েছেন। হঠাৎ সেই বোনের চোখ পড়ল এক গোলাপ বিক্রেতার দিকে। বিক্রেতা করুণ স্বরে বলছে, “একটা গোলাপ মাত্র ১০ টাকা, একটু নিয়ে নেন।” কিন্তু সবাই তাকে এড়িয়ে চলছিল।

বোনটির মনে হল, বিক্রেতা বুঝেছে যে সে গোলাপ চাইছে। বিক্রেতা সরাসরি তার স্বামীর সামনে এসে গোলাপ মেলে ধরল। কিন্তু স্বামী খুব মনোযোগ দিয়ে যে দোকানে যাবেন, সেই দিকে যাচ্ছিলেন। মাঝপথে বিক্রেতা বাধা দিলে স্বামী কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাকে সরিয়ে দিলেন।

এ ঘটনা দেখে বোনটির মনে কষ্ট লাগল। মাথায় সাথে সাথেই চিন্তা এল, “দশ টাকা দিয়ে একটা গোলাপও কিনে দিল না? আমার মূল্য কি তার কাছে ১০ টাকাও নয়?”

কিছুক্ষণ হাঁটার পর বোনটি বলল, “আপনি কেন আমাকে গোলাপটা কিনে দিলেন না?”

স্বামী অবাক হয়ে বললেন, “ওও তুমি কি আসলেই ওই গোলাপ চাচ্ছ? আমি তো জানি না তুমি গোলাপ চাইছো। চাও তো, এখনই তোমাকে কিনে দেই, পিছনে গিয়ে ডাক দিই ছেলেটাকে? আর তুমি গোলাপগুলো ভালোভাবে দেখোনি? অনেক পুরোনো হয়ে গেছে, কালচে দাগ পড়েছে, গন্ধও নেই তেমন। আমি তোমাকে যদি গোলাপ দিই, তাহলে সুন্দর একটি বড় তোড়া কিনে দিব ইনশাআল্লাহ।”

এই কথা শুনে বোনটির মন ঠান্ডা হল। কয়েক মুহূর্ত আগের নেগেটিভ চিন্তা করে সে বিব্রত বোধ করল।

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা হল: শুরুতে বোনটির মনের কষ্ট তার নিজের ভুল চিন্তার ফলেই ছিল। সে ধরে নিয়েছিল, “আমার স্বামী আমাকে একটা ফুলও কিনে দিতে চায় না!” অথচ স্বামীর মনে এমন কোনো চিন্তা ছিল না, বরং তিনি সবসময় স্ত্রীকে ভালো কিছু দিতে চেয়েছেন।

ছেলেদের প্রায়ই ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করার মতো সময়, এনার্জি বা মোটিভেশন থাকে না, কারণ একজন দায়িত্বশীল স্বামীকে সংসারের বড় বড় দায়িত্ব দেখতে হয়। তাই স্বামীরা স্ত্রীর মুখ দেখে সবকিছু বুঝে নিতে পারেন না, এবং এটা তাদের দোষ নয়। মাঝে মাঝে বিষয়গুলো খুলে বললে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।

এভাবে সহানুভূতির সাথে বোঝা উচিত যে, স্বামী মনের কথা পড়তে না পারলেও তিনি স্ত্রীকে ভালোবাসেন। তাই মনে রাগ জমিয়ে না রেখে খোলামেলা যোগাযোগ করা উচিত। খোলামেলা আলাপ করলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়, ইনশাআল্লাহ।

দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

১. কখনোই অযাচিত ধারণা করবেন না যে, আপনার স্বামী আপনার মনের কথা পড়ে ফেলবেন।

২. মনে করবেন না যে, একজন দায়িত্বশীল পুরুষ ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে কষ্ট দিতে চায়।

৩. কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, অতি ধারণা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাপ (সূরা হুজুরাত)। তাই ওভারথিংকিং এড়িয়ে স্বামীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করুন।

৪. রাগ বা কথা চেপে না রেখে, শান্তভাবে, ভদ্র ভাষায় আলোচনা করুন। এতে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।

৫. প্রত্যেকে নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝার চেষ্টা করুন এবং আল্লাহর কাছে দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির জন্য সবসময় দু’আ করুন।

৬. প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিন। এভাবে করতে পারলে মানসিক ক্লান্তি আসবে না। মনে রাখবেন, আপনার বিয়ের পরিচর্যা করা আপনার ইবাদতের অংশ।

এভাবে খোলামেলা আলোচনা, সহানুভূতি এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে, দাম্পত্য জীবনে বরকত আসবে ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুন: বিয়ের বয়স: আমাদের সমাজের নিয়ম ও যৌক্তিকতার দ্বন্দ্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top