ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিশাল অর্থের অপব্যয়: নতুন চেয়ারম্যানের অন্তর্দৃষ্টি

ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকেরও বেশি অর্থ একাই নিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। তিনি জানান, গত সাত বছর ধরে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির অধিকাংশ ঋণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে ব্যাংকের ঋণ সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ হিসাব এবং বন্ধক রাখা সম্পদের মূল্য পুনর্মূল্যায়নের কাজ চলমান।

চেয়ারম্যান মাসুদ বলেন, এস আলম গ্রুপের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পদগুলোর মূল্য নির্ধারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, যার কারণে ঋণ প্রদানের সময়ে সম্পদের মূল্য অধিক দেখানো হয়েছে। এছাড়া, এস আলম গ্রুপের এমন সব সম্পদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, যেগুলোর বিপরীতে ব্যাংকে কোন বন্ধক রাখা হয়নি। আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে এই সম্পদগুলোর চিহ্নিতকরণ এবং ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে।

অ্যাওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন ‘প্রাণ খুলে’ কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন উল্লেখ করে, মাসুদ বলেন, ইসলামী ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হওয়ার পর আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাসুদ, যিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন, ব্যাংকের বর্তমান অবস্থার উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।

মাসুদ জানান, ২০২২ সাল থেকে ব্যাংকে তারল্য সংকট শুরু হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক, প্রবাসী আয় পাঠানো গ্রাহক, শেয়ারধারী ও বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান—কেউই ব্যাংকের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না। এ অবস্থার উন্নয়নে ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের ওপর তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্বে যথাযথ নিরীক্ষা না হওয়ায় ব্যাংকের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তবে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যাংকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংকও সহায়তা করবে বলে উল্লেখ করেন মাসুদ।

২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম। ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই এস আলম গ্রুপ নিয়েছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার এস আলম গ্রুপের অধীনে থাকলেও, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং ব্যাংকের নতুন পথচলা শুরু করতে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, ২০২৪ সালটি গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নিবেদিত হবে এবং আগামী কয়েক বছরে ব্যাংকটি পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: সারা দেশে চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা: নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আন্দোলন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top