ছোটবেলায় যখন কিছুই বুঝতাম না তখন ভাবতাম না জানি পৃথিবীটা কতো সুন্দর! বড় হলে কতোই না জানি আনন্দ উপভোগ করতে পারবো। কতোই না সুখ শান্তি পাবো। কিন্তু পরিস্থিতি আমায় বুঝিয়ে দিচ্ছে – এক অশান্ত পৃথিবীতে আমি বাস করছি। আমার নিজেরই নিরাপত্তা নাই, আমি আর কার পাশে দাড়াবো আর কাকেই বা সাহায্য করবো।
আমি তো নিজেই আমার চোখের জল মুছতে মুছতে ক্লান্ত। আমি আর কার চোখের জল মুছবো। এ অশান্ত পৃথিবী আমায় একদম শান্ত বানিয়ে দিচ্ছে। আমায় পঙ্গু করে দিচ্ছে। আমার অন্তরের মধ্যে ফুটে ওঠা শত পদ্মকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
যখন আমার চারপাশে তাকাই আমি অবাক হয়ে যাই। মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া আর বাকি সবাই হাহাকারে ডুবছে। তাদের যেন সমস্যার শেষ নেই। তারা কাউকে কিছু বলতে পারছে না। নিজের যন্ত্রণা নিজের কাছে রেখেই ছটফট করে মরছে। আর আমি তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। কারন, আমার নিজেরই তো কিছু নেই – আমি কি নিয়ে তাদের পাশে দাড়াবো।
পৃথিবীতে যতগুলো দেশ রয়েছে কোন একটি দেশ পুরোপুরি ভালো নেই। কোথাও টাকা আছে তো ধর্ম নেই। ধর্ম আছে তো টাকা নেই। কোথাও ইনকামের সোর্স আছে তো হালালভাবে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কোথাও বিশুদ্ধ পানি আছে তো বিশুদ্ধ গ্লাস নেই। পৃথিবীর অবস্থা বড়ই করুণ যা আমি আমার অল্প বয়সেই অনুধাবন করছি।
পরিবার থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব জায়গায় শুধু সমস্যা আর সমস্যা। কেউ কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয় না। সামান্য টাকার জন্য মানুষ মানুষকে খুন করছে। সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে মানুষ মানুষকে জবাই করছে। এখন মানুষরা সত্য বলতে ভয় পায়। না জানি, কেউ এসে তার গলাটা চেপে ধরে।
যে ব্যক্তি ৫ কেজি ওজন বহন করার ক্ষমতা রাখে সে ২০ কেজির কথা বলে বেড়ায়। যার দৈনিক ইনকাম ৫০০ টাকা সে বিপথে গিয়ে ৫০০০ টাকা ইনকাম করে। কয়েক মাসে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। আমি এসব দেখি, শুনি কিন্তু বলার সাহস রাখি না। কারন, বললেই আমি খুন হয়ে যেতে পারি, নাই হয়ে যেতে পারি এ সুন্দর পৃথিবী হতে।
আলকোরআন আল্লাহ প্রদত্ত বানী যাতে রয়েছে মানুষের জীবন বিধান। কিন্তু কেউ তা মানছে না কতিপয় লোক ছাড়া। বেশিরভাগ মানুষই বিপথে চলে যাচ্ছে। চোখের সামনে অল্প বয়সীরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সৎ পথে ডাকার জন্য মানুষ থাকছে না। হে আল্লাহ, এ কোন আজব পৃথিবীতে আমায় পরীক্ষার জন্য পাঠালে! আমি তো নিজেকে সঠিক জায়গায় আবদ্ধ রাখতে পারছি না।
ঘরের স্ত্রী এখন তার স্বামীর কথা শুনে না। মন চাইলেই যা ইচ্ছে তাই করে ফেলে। মাঝে মাঝে ভয়াবহ সব খবর শুনে নিজের স্ত্রীর প্রতিও খানিকটা ভয় চলে আসে। নিজের মনকেই নিজে বিশ্বাস করতে পারি না।
হালাল রুজি রোজগারের পথ কমে যাচ্ছে। মানুষ যাবে কোথায়! হাজারটা মিথ্যুক মানুষের সাথে হাতে গোনা কয়েকজন সত্যবাদী মানুষ কিভাবে টিকে থাকবে! সুন্দর পৃথিবী তো তাদের জন্য মহা অসুন্দর হয়ে উঠছে।
স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নৈতিকতা শেখানো হচ্ছে না। আধুনিক সব পড়াশোনা শেখানো হচ্ছে। এই আধুনিক পড়াশোনায় কতোটা নীতিবোধ, মনুষত্ববোধ, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ রয়েছে তা আমার অজানা। তবে আমার মনে হচ্ছে – বাচ্চারা ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। ইসলামী শিক্ষা না দেয়া হলেও অন্তত তাদের মনুষত্ববোধ শেখানো হোক।
জীবন শান্তির জন্য পিপাসাময় হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার প্রয়োজন মিটানোর জন্য প্রতিনিয়তই ব্যস্ত থাকছে। কিন্তু যাদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য ব্যস্ত থাকছে শেষে তারাই ছেড়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের সন্তানের সম্পর্কে ফাটল ধরছে। নিম্ন শ্রেণী থেকে উচ্চ শ্রেণীর সবাই স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীকেই তারা সবকিছু মনে করছে। পৃথিবীকে সবকিছু মনে করছে এটা তো ভালো বিষয়। এখানেই তাদের কাছে সব সুখ। অথচ তারা পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাচ্ছে না। অসুন্দর পরিবেশে সারাক্ষণ তারা সুখ অন্বেষণ করছে।
এ ধরায় আমি বিচলিত। আমি নির্বোধ হয়ে যাচ্ছি। আমি পারছি না আত্মহত্যা করতে। কারন, এটা তো জঘন্যতম অপরাধ। এই অপরাধের তো ক্ষমা হয় না। নিজেকে শেষ করে দিলেই তো আর সব কিছুর সমাধান হয়ে যায় না।
আমি শেষ যুগের কিছু বর্ণনা পড়েছি। আমার মনে হচ্ছে, সেই নিকৃষ্টতম সময়টা শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাবলে কেউ কাউকে সামান্য ছাড় দিচ্ছে না। মন চাইলেই চরম ক্ষতি করছে। সীমালঙ্ঘন করছে। কেউ যেন দেখার নেই, কেউ যেন বলার নেই। অসহায় আজ চরম অসহায়। দুর্নীতিবাজরা আজ উচ্ছ্বসিত।
হে আল্লাহ, আমি তো প্রতিনিয়ত কেঁদেই চলেছি। আমায় তুমি রক্ষা করো। এ সুন্দর পৃথিবীতে আমার জন্য যে কয়টা দিন তুমি বরাদ্দ রেখেছো, সেই কয়টা দিন আমি যেন সাহস করে বাঁচতে পারি। আমি যেন সম্মানের সাথে বাঁচতে পারি। আমি যেন আমার দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ সঠিকভাবে পালন করতে পারি।
আমার মৃত্যু যেন অসম্মানের সাথে না হয়। আমি যেন সত্য কথা সাহস করে বলতে পারি। আমায় তুমি সাহস দাও। আমি যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারি, রুখে দাড়াতে পারি। আমায় তুমি সে শক্তি দাও।
পৃথিবীতে যতো কঠোর শাসক রয়েছে তাদের মন তুমি নরম করে দাও আল্লাহ। তারা যেন নিপীড়িতদের উপর আর কোন নিপীড়ন না করে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো যেন বাঁচতে পারে। আমরা যেন তোমার পথে থেকে বাঁচতে পারি। হে আল্লাহ, আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই। তুমি এই অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করে দাও। সব যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহরগুলোকে যুদ্ধ থেকে পরিত্রাণ করে দাও। অসহায়ের আর্তনাদ কি তোমার কাছে যায় না! তুমিই তো সকল কিছুর উর্দ্ধে একমাত্র ভরসা। আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করো। আমরা কেউ যেন তোমার আদেশ নিষেধের বাইরে না যাই (আমিন)।
আরও পড়ুন: সাধারন নাগরিকের ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে কতটুকু জানা প্রয়োজন